সাদ্দাম হোসেন শুভ:- নিষ্ঠুর বাবা-মা ২ বছরের কন্যা সন্তানকে দুই পায়ে গরম খুন্তির ছ্যাকা দিয়ে অমানুষিক শিশু নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে । ছোট্ট মেয়েকে কি কারণে এহেনও অত্যাচার তা নিয়ে এলাকাজুড়ে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে।
এ বিষয়ে শিশুর বাবা-মা ২ জনকে আসামী করে ফতুল্লা মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন নির্যাতিতা শিশুর নানী ‘লাইলী’।
বুধবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলার ফতুল্লা থানাধীন পাগলা দক্ষিণ নয়ামাটি নাক্কাটার বাড়ী এলাকার মুল্লুক চাঁনের বাড়ীতে ঘটনাটি ঘটে।
শিশুটির নাম রোজা আক্তার সামিয়া তার বয়স মাত্র ২ বছর ১ মাস। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সামিয়া । এই বয়সের শিশুরা থাকবে বাবা-মায়ের অনেক আদুরে। কিন্তু সামিয়ার বেলায় হল উল্টো। প্রতিদিনই মায়ের হাতেই তাকে নির্যাতনে শিকার হতে হতো এই অবুঝ শিশুর ।
সামিয়ার এমন নিষ্ঠুর ডাইনী মা হলেন পটুয়াখালী জেলার পটুয়াখালী থানাধীন খাশের হাট গ্রামের শাহজাহান মিয়ার মেয়ে লাইজু আক্তার। সামিয়ার বাবা হলেন বরিশাল জেলার বাউফল থানাধীন রাজনগর গ্রামের।
লাইজু-সজল দাম্পতি পাগলা দ:নয়ামাটি এলাকার মুল্লুক চাঁনের বাড়ীর ভাড়াটিয়া।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, বিবাদী লাইজু ও তার স্বামী সজলের মধ্যে কন্যা সন্তান নিয়ে প্রায় সময় ঝগড়া বিবাদ চলে আসছে। তাদের সংসার জীবনে অশান্তি সৃষ্টির কারন হিসেবে নিজের অবুঝ কন্যা সন্তানকে দায়ী করে। কয়েক বার শিশুটিকে প্রাণে মেরে ফেলারও চেষ্টা চলায় নির্যাতিতার বাবা-মা।
প্রতিবেশীরা জানায়, দেড় বছর ধরে এ ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছে শিশুটি। সর্বশেষ বুধবার (২০ মার্চ) সন্ধ্যায় শিশুটির ওপর নির্যাতন সইতে না পেরে প্রতিবেশীরা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং শিশুটির নিষ্ঠুর মা’কে আটক করে রাখে। এরপর অবস্থা বেগতিক হলে সন্তান রেখে সে আত্মগোপনে চলে যাওয়ার অপচেষ্টায় ব্যর্থ হয়।
প্রতিবেশীরা সামিয়ার ওপর অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দিলেন। কখনও মুখে বালিশ চেপে, আবার কখনও মুখ বেঁধে নির্যাতন করা হয় তাকে। নির্যাতনের সময় থাকে ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ। শরীরের প্রতি ইঞ্চিতে নির্যাতনের দাগ। একজন হাঁপিয়ে উঠলে আরেকজন মারেন। একটু শব্দ করলে গরম খুন্তি চেপে ধরেন মুখে। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকেও শুনতে হয় অকথ্য গালাগাল।
নির্যাতিত শিশুটির নানী লাইলী বেগম বলেন, বাবা-মা হয়ে কীভাবে শিশুটির ওপর এমন নির্যাতন করতে পারে- এ ঘটনায় তিনি হতবাক। তিনি আরও বলেন, আমার মেয়ে ও মেয়ের জামাইকে কয়েকবার ডেকে সতর্ক করেও কোনো লাভ হয়নি।
বাড়ীর মালিক মুল্লুক চাঁনের স্ত্রী বলেন, এমন বাবা-মার বিচার হওয়া উচিত। প্রতিদিন মাথায় অথবা শরীরে কোনো না কোনো আঘাতের চিহ্ন থাকে সামিয়ার । জিজ্ঞাসা করলে তার বাবা-মা প্রতিবেশীর সন্তানদের দোষ দিয়ে নির্যাতন ঢাকার চেষ্টা করে।
এ বিষয়ে অভিযোগের তদন্তকারী কর্মকর্তা ফতুল্লা মডেল থানার সহকারী উপ-পরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানের সাথে মুঠো ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, শিশু নির্যাতনের অভিযোগ পেয়েছি, সঠিক তদন্ত করে অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
এলাকাবাসী জানান, ঘটনা ঘটে সন্ধ্যায় পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছায় রাত সাড়ে ১২ টায়। বিবাদী নির্যাতিত শিশুর মা’কে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সাথে সাথেই ঘটনাস্থল থেকে চলে যায় পুলিশ।
এমন অমানবিক নির্যাতনের বিষয়ে ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের দায়িত্বহীন কর্মকান্ডকে দায়ী করছেন এলাকাবাসী।
এ বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপ কামনা করেন পাগলা, নয়ামাটি এলাকাবাসী।