সাদ্দাম হোসেন শুভ:- অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণ করে শাস্তিপূর্ণ ও নিরাপদ সমাজ ব্যবস্থার লক্ষ্যে ২০০৬ সালের দিকে বাংলাদেশে ব্যাপক ভিত্তিক কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম শুরু হয়।
‘জনতাই পুলিশ’ এ শ্লোগানকে সামনে রেখে জনসেবামূলক পুলিশ কার্যক্রম শুরু করতে এবং অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, পেশাদার অপরাধীদের গ্রেফতারে পুলিশ কার্যক্রমে জনতার সহযোগিতায় গঠন করা হয়েছিলো কমিউনিটি পুলিশিং ব্যবস্থা। অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তাদের মধ্যে অনীহা, রাজনৈতিক হন্তক্ষেপ এবং অযোগ্য ও কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের কারণে কমিউনিটি পুলিশিংয়ের ভাবনা পোক্ত করা যাচ্ছে না।
বরং থানায় থানায় দালাল, পুলিশ কর্মকর্তাদের ব্যক্তিগত সোর্স, পাড়া-মহল্লার ছিচকে অপরাধীরা রাজনৈতিক পরিচয়ে কমিউনিটি পুলিশিং এ সদস্য হয়ে ব্যক্তি স্বার্থ উদ্ধার করছে। কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের মাধ্যমে ‘ওপেন হাউজ ডে’ (থানা পুলিশের সেবা, অপরাধ ও অপরাধী সম্পর্কে (উন্মুক্ত আলোচনা)তে দাপট থাকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতাদের।
দলীয় ব্যক্তিদের এসব অনুষ্ঠান নিমন্ত্রণ করে কেবল সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের পক্ষে সাফাই গাওয়ানো হয় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সামনে রেখে।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম গঠন করতে ও কার্যক্রম গতিশীল করতে জেলায় জেলায় ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠান করার মাধ্যমে পুলিশ প্রধান কাজ করে যাচ্ছেন। এরই অংশ হিসেবে সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জ জেলায় কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামের মাধ্যমে বড় ধরণের ওপেন হাউজ ডে অনুষ্ঠানও করা হয়েছে। ওইসব অনুষ্ঠানে জেলা পুলিশ সুপার নিজে উপস্থিত থেকে স্থানীয় সাধারণ মানুষের বক্তব্য শুনেছেন।
এতে সকল পুলিশ সদস্যকে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম কার্যক্রমের সাথে যুক্ত থাকতে নির্দেশ দেয়া হয় এবং থানার ওসিরা কমিউনিটি পুলিশিং ফোরাম কার্যক্রম না করলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও জানানো হয়।
প্রথমে কয়েকটি জেলা থেকে কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠনের মাধ্যমে এর কার্যক্রম শুরু হলেও ধীরে ধীরে তা দেশের সব বিভাগ, জেলা ও থানা পর্যায়ে শুরু হয়। প্রত্যেক থানায় স্থানীয়ভাবে সর্বজন স্বীকৃত গণ্যমান্য অরাজনৈতিক ব্যক্তিকে সভাপতি করে কমিটি গঠন করে কমিউনিটি পুলিশিং কার্যক্রম চালু করা হয়।
পুলিশ সদর দফতরের চিন্তা ছিলো, এসব ব্যক্তিদের সাথে প্রতিমাসে থানা পুলিশ বসে বৈঠক করে এলাকার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সমস্যার সমাধানের মাধ্যমে শৃঙ্খলা ও অপরাধ মুক্ত এলাকা গড়ে তোলা। মাদক, জুয়া, নারী নির্যাতন, হত্যা, চুরি ডাকাতিসহ সমাজের দাঘি অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে পুলিশের কার্যক্রমে জনগণের অংশীদারিত্ব তৈরি করাই ছিলো কমিউনিটি পুলিশিংয়ের মূল লক্ষ্য।
কিন্তু অধিকাংশ পুলিশ কর্মকর্তার অসহযোগিতার মনোভাব এবং রাজনৈতিক প্রভাবযুক্ত কমিউনিটি পুলিশিং কমিটি গঠনসহ বেশ কিছু কারণে এ কার্যক্রম এখনো সুফল পাচ্ছে না। অধিকাংশ এলাকায় কমিউনিটি পুলিশে রাজনৈতিক দলের লোকজন জড়িত। এতে কার্যক্রম জোড়ালো হচ্ছে না, ঠিকমতো সমন্বয়ও হচ্ছে না।
এছাড়া, অনেকেই কমিউনিটি পুলিশিং কমিটির নাম ভাঙিয়ে নানা ধরণের অপরাধের সাথেও জড়িয়ে পড়ছে। ফলে অপরাধ দমনের পরিবর্তে কমিউনিটিং পুলিশিংয়ের মাধ্যমে অপরাধ আরো বাড়ছে।
তবে পছন্দের লোক ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখায় জনমুখী পুলিশিং চালুর মূল উদ্দেশ্য ভেস্তে যেতে শুরু করেছে। এসব থেকে কমিউনিটি পুলিশিং ফোরামকে মুক্ত করতে না পারলে এর মূল লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভব হবে না।